ছয় বছর আগে আমের এই জাতটি ছিল দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণাকেন্দ্রে। ১২ মাস ফল দেবে, এমন আমের এই জাতটি নিয়ে নতুন আশা ডানা মেলছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তবে শঙ্কাও কম ছিল না। কৃষকের খামারে সারা বছর একই রকমভাবে ফল দেবে তো? এই সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে কৃষকের খামারে আলো ছড়াচ্ছে সুমিষ্ট ফলটি। আর এ ক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ মেজর (অব.) সোলায়মানের সোয়াস অ্যাগ্রো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি–১১ জাতের আমটিকে তিনি সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
ফেনীর সোনাগাজীতে মেজর (অব.) সোলায়মানের গড়ে তোলা খামার এখন ওই বারোমাসি আমের জাত ছড়িয়ে পড়ার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তাঁর খামারে তো ১২ মাস আমের ফলন দিচ্ছেই। একই সঙ্গে সেখান থেকে কলম বা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের খামারিরা।
‘একটি গাছ থেকে বছরে তিনবারে ১০০ কেজির বেশি আম পাচ্ছি। ফলন ভালো, আকারে বড়, মিষ্টতা ভালো, দাম ভালো। শীত–গরম সব সময় মিলছে। আমি এই বারোমাসি আমের কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার বাগানে ৮০ জাতের আম রয়েছে। কিন্তু বারি-১১ তুলনাহীন।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) চট্টগ্রাম শাখার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি-১১ আমের জয়গান এভাবেই করলেন মো. সোলায়মান।
মো. সোলায়মান ১৯৮৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীতে খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত আমের প্রতি তাঁর আসক্তি। মধু, জৈব সার, মৎস্য চাষসহ নানা প্রকল্প রয়েছে তাঁর।
দেশ–বিদেশের ৮০টি জাতের আমের গাছ রয়েছে তাঁর বাগানে। তবে ভালোবাসায় মজেছেন বারি-১১ আমের। বারি-১১ বারোমাসি আম। চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে প্রায় প্রতিদিন এ আম সংগ্রহ করা যায়। তবে বছরে তিনবার বড় আকারে ফলন আসে বারি-১১ থেকে।
তাঁর এ বাগান থেকেই মূলত বারি–১১ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সবখানে। বিভিন্ন জেলায় তাঁর কাছ থেকে চারা নিয়ে যান লোকজন। চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণাগার বারি–১১–এর উদ্ভাবক হলেও তাদের কাছে বেশি আকারে বিক্রি করার মতো চারা থাকে না।
মো. সোলায়মান বারি–১১–এর প্রেমে মজার গল্পটি শুরু করলেন এভাবে, ২০১২-১৩ থেকে একটি বারোমাসি আম নিয়ে কৃষি গবেষণাগার চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ চলছিল। গবেষণাগার এই বারোমাসি আমে সফলতা পায়। পরে ২০১৪ সালে আমটি স্বীকৃতি পায় বারি-১১ নামে। এরপর তিন বছর ধরে আম ধরতে শুরু করেছে। কিন্তু গত বছর থেকে বাম্পার ফলন হচ্ছে। এবার শীতেও ফলন ভালো হয়েছে। সোয়াস অ্যাগ্রোতে কোনো রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়া সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে আমের ফলন হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সোলায়মানের বাগানে ৭০টি বারি-১১ আমগাছ ফল দিচ্ছে। আরও ১৩০টি আগামী এক বছরের মধ্যে ফলনের আওতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম দুই টন বারি-১১ আম পাওয়া যায়। এরপর নভেম্বরে পাওয়া যায় আরও দুই টন। বাগানে ২৫টি পুকুর রয়েছে। পুকুরের পাড়ে বিভিন্ন জাতের আমগাছ বেড়ে উঠছে।
কৃষিবিদেরা জানান, অন্য প্রজাতির একটি গাছ থেকে বছরে ৩৫ কেজি আম পাওয়া যায়। আর বারি-১১ বছরে তিনবারে ১২০ কেজি পর্যন্ত আম দিচ্ছে।